কেস স্টাডি:বিবিসি
বিবিসি অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিয়ে লিখতে গেলে প্রথমেই অনলাইন সাংবাদিকতা সম্পর্কে জানতে হবে।
অনলাইন সাংবাদিকতা:
অনলাইন সাংবাদিকতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আমরা বলতে পারি যে, সংবাদ সংগ্রহ এবং ঘটনার বর্ণনা লিখে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সাইবার স্পেসে প্রকাশ করার নামই সাধারণত অনলাইন সাংবাদিতকা।
অনলাইন সাংবাদিকতার প্রকারভেদ:
অনলাইন সাংবাদিকতাকে মূলত তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
১. open participatory: এ ধরনের অনলাইনে সংবাদ পড়ার পাশাপাশি পাঠকরা তাদের স্বীয় মন্তব্য প্রকাশ করতে পারেন।
২. close participatory: এ ধরনের অনলাইনে পাঠকেরা শুধুমাত্র সংবাদ পড়তে পারবেন। কোনো মতামত দিতে পারবেন না।
৩. public connectivity: এ ধরনের ওয়েবসাইটে মতামত জানাতে হলে নির্দিষ্ট হাউস রুলস মেনে চলতে হয়। মতামত জানানোর পর এক দল এডিটর বোর্ড বা মডারেটররা ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে সেই মতামতটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন।
প্রকারভেদগুলোর বিবেচনায় বিবিসি অনলাইন 'ওপেন পারটিসিপেটরি' ধরনের অনলাইন সংবাদপত্র। কারণ এখানে কোনো সংবাদ পড়ার পর পাঠকেরা চাইলে মন্তব্য করতে পারেন। মন্তব্য জানাতে হলে পাঠককে প্রথমে লগইন করতে হয়। তবে সেই মন্তব্য আগে বিবিসির নির্দিষ্ট বোর্ড দ্বারা অ্যাপ্রুভ হলে তবেই অনলাইনে প্রকাশিত হয়।
বিবিসি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা:
বিবিসির পূর্ণ রূপ ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন। এটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি গণমাধ্যম সংস্থা। ১৯২২ সালে লন্ডনের মার্কোনী হাউজে বিবিসি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিই বিশ্বের প্রাচীনতম জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা। বিবিসির সদর দপ্তর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে অবস্থিত।
বিবিসির সংবাদ কাঠামো:
সংবাদ কাঠামোর ব্যাপারে বিবিসি বরাবরই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নিচে বিবিসির সংবাদ কাঠামোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো।
- সাংবাদিকতার নীতিমালা মেনেই বিবিসি সংবাদ প্রচার করে।
- বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিবিসি সংবাদ সূচনায় ষড় ÕKÕ নীতি অনুসরণ করে। তবে অনুসন্ধানী সংবাদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো সংবাদ সূচনায় ষড় K নীতি মেনে চলে না।
- অনুসন্ধানী প্রতিবেদন গুলোতে ঘটনার বিশ্লেষণ করা হয় এবং সেখানে সন্দেহমূলক প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়। ফলে নতুন নতুন তথ্য যোগ করে একটি ঘটনার মূল সংবাদটি বেরিয়ে আসে।
- বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ঘটনার পরপরই সংবাদ না দিয়ে কিছুটা অনুসন্ধান চালিয়ে বরং অনেক তথ্যের সমন্বয়ে বিশ্লেষণধর্মী সংবাদের প্রাধান্য দেখা গেছে। এখানে ঘটনার বিভিন্ন দিক, কারণ সম্পর্কে মতামত ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
- ঘটনা ঘটার পরে সংবাদ যথেষ্ট দ্রুতই প্রকাশিত হয়। তবে সময়ের চেয়ে বস্তুনিষ্ঠতায় গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশি।
- সংবাদগুলোর হেড লাইনের পাশাপাশি সাব হেডিং যুক্ত করা হয়েছে।
- সংবাদের বডিতে বিভিন্ন ধারণা, প্রশ্ন যুক্ত করা এবং এবং উত্তর খোঁজার চেষ্টার মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে।
- সংবাদ ঢালাও ভাবে না লিখে অনেকটা ছোট ছোট প্যারা করে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে, যেটা পাঠকের চোখে দৃষ্টিনন্দন মনে হবে।
বিবিসির সংবাদ উপস্থাপন:
বিবিসিতে মূলত চার কলামে সংবাদগুলো প্রকাশিত হয়। সম্পূর্ণ সংবাদে প্রবেশ করলে প্রথমে শিরোনাম, তার নিচে সময় ছবি, ছবির ক্যাপশন এবং সম্পূর্ণ সংবাদটি থাকে। বিবিসির সংবাদের গঠনের বিশেষত্বগুলো হলো:
- সংবাদের গুরুত্বপূর্ণ প্যারাগুলো বোল্ড করা থাকে।
- কিছু কিছু প্যারায় বুলেট ও নাম্বারিং ব্যবহার করে বোল্ড করা হয় যা সকলেত দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
- মূলত এখানেই নিউজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কোটেশন আকারে তুলে ধরা হয় যা খুবই দৃষ্টি নান্দনিক।
- এদের লেখায় ছোট ছোট প্যারা তৈরি করা হয় যাতে হিজিবিজি না দেখায়।
- প্রত্যেক প্যারার মাঝের স্পেসও অনেক বেশি থাকে
- সংবাদ লেখার ক্ষেত্রে বিবিসি তাদের নিজস্ব ফন্ট ব্যবহার করে৷
- প্রত্যেক সংবাদে অধিক সংখ্যক ছবি ব্যবহার করা হয় যা মূল সংবাদের প্রতিনিধিত্ব করে এবং মূল ঘটনা পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়।
- এখানে নিউজের ফুটেজের পাশাপাশি এইচডি ভিডিও ব্যবহার করা হয় যা পাঠকদের আকৃষ্ট করে।
- পাঠকের কথা মাথায় রেখে নিউজগুলো এমনভাবে সাজানো হয় যাতে পাঠকরা শুধু নিউজের উপর চোখ বুলালেও পুরো ঘটনা আচ করতে পারে।
- বিবিসির সংবাদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহজ শব্দ, ভাষা ব্যবহার করা হয়, যাতে করে পাঠক সহজেই সংবাদটি বুঝতে পারে।
- বিবিসির সংবাদের মাঝে খুব বেশি পরিমাণ বিজ্ঞাপন থাকে না।
সংবাদের
ধরন:
বিবিসিতে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হয়ে থাকে।যেমন: ফলোআপ সংবাদ, ডেইলি ইভেন্ট সংবাদ, অনুসন্ধানীমূলক সংবাদ, প্রচারধর্মী সংবাদ, বিশেষ দিবস/ দিনের সংবাদ ইত্যাদি।
ফলোআপ সংবাদ: বিবিসির অনলাইন পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পারি যে, অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদগুলোর মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০ টি ফলোআপ সংবাদ থাকে। ফলোআপ নিউজ বা অনুগামী সংবাদ বলতে বোঝায় যে ঘটনাটি কিছুদিন আগে ঘটেছে এবং যার প্রভাব এখন পর্যন্ত জনগণের নিকট বিদ্যমান রয়েছে। ফলোআপ সংবাদের ক্ষেত্রে বিবিসি সর্বদা আগের ঘটনায় কোনো নতুন তথ্য পেলে তবেই সংবাদ করে থাকে।
ডেইলি
ইভেন্ট সংবাদ: প্রতিদিন ঘটে যাওয়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই ডেইলি ইভেন্ট সংবাদ। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম হওয়ায় প্রতিদিনের সংবাদে বিবিসিতে যুক্তরাজ্যের সংবাদে প্রাধান্য পায়। ডেইলি ইভেন্ট সংবাদে ইংল্যান্ডকে নিয়েই প্রতিদিন প্রায় ৮০-১০০ টি সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। অন্যান্য অঙ্গরাজ্যগুলোর সংবাদ কিছুটা কম আসে অনলাইনে। উত্তর আয়ারল্যান্ড কেন্দ্রিক প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ টি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়া স্কটল্যান্ডের ৩০-৩৫টি এবং ওয়েলসের ২৫-৩০টি সংবাদ প্রতিদিন বিসির অনলাইনে জায়গা পায়।
আফ্রিকা মহাদেশ নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ টি করে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রায় ২০-২৫টি করে সংবাদ প্রতিদিন জায়গা করে নিচ্ছে বিবিসির অনলাইনে। যেখানে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে প্রতিদিন ৭-১০টি, ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকা নিয়ে ১০-১৫ টি, এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রতি ২ দিনে মাত্র ২-৫টি সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১০ টির বেশি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বিবিসির এই এশিয়া মহাদেশভিত্তিক। সেখানে একসপ্তাহের ৮৭টি সংবাদ পর্যালোচনা করেও বাংলাদেশের কোনো সংবাদ পাওয়া যায় নি।
রাজনৈতিক
সংবাদ: যুক্তরাজ্যের রাজনীতি নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৫০টি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এখানে সাধারণত নিত্যদিনের রাজনৈতিক ঘটনাগুলো বেশি স্থান পায়। চলমান ঘটনার পাশাপাশি রাজনীতি নিয়ে প্রতিদিন বিশ্লেষণী সংবাদ থাকে ৭ থেকে ৮টি। এখানে সরকারী দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের সংবাদও সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়।
চলমান বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম বড় উপাদান আমেরিকা আর চীন। এ নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ টি সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। সেখানে ট্রাম্পের হুমকি, শুল্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনা, চায়নাদের উপর চাপ, এশিয়ান অর্থনীতিতে বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব এসব বিষয় ফুটে উঠেছ। বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারতকে নিয়ে দিনে গড়ে ১টি সংবাদ এবং অন্যান্য সংবাদ গুলো ইউরোপীয় দেশগুলো নিয়ে করা হয়েছে যার সংখ্যা দিনে ৫-৬ টি। এছাড়া অন্যান্য মহাদেশগুলো থেকে সবমিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ টি রাজনৈতিক সংবাদ প্রকাশিত হয়।
অনুসন্ধানী সংবাদ: অনুসন্ধানী সংবাদ হল সংবাদের একটি ধরন যেখানে রিপোর্টার কোন একটি বিষয়, যেমন মারাত্মক অপরাধ, রাজনৈতিক দুর্নীতি, বা কর্পোরেট ভুল-ভ্রান্তিসমূহ গভীরভাবে তদন্ত করে থাকেন। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ এবং সন্দেহ মূলক প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয়, ফলে নতুন তথ্য যোগ করে একটি ঘটনার মূল সংবাদটি বেড়িয়ে আসে। বিবিসি প্রতিনিয়ত ব্যাপক অনুসন্ধানমূলক সংবাদ প্রচার করে আসছে।প্রতিদিন সব ক্যাটাগরী নিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ টি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রচার কবে বিবিসি।
বিবিসির সংবাদের ধরনের সাথে বাংলাদেশের প্রথম আলোর তুলনা:
বিবিসি সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমের মধ্যে অন্যতম। অন্যদিকে বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোর মধ্যে সর্বাধিক পঠিত হয় প্রথম আলো। উপরে আমরা বিবিসির প্রতিদিনকার বিভিন্ন ধরনের সংবাদের সংখ্যার গড় পরিমাণ দেখেছি।
প্রথমআলোর ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন গুলোর মধ্যে দেখা যায় যে প্রতিদিনকার ফলোআপ সংবাদের সংখ্যা প্রায় ৬-৭ টি। ডেইলি ইভেন্ট সংবাদের সংখ্যা ৬০-৭০টির মতো।এর মধ্যে আন্তজার্তিক সংবাদ থাকে সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ টির মতো।
প্রথম আলোতে বাংলাদেশকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে বেশি। রাজনৈতিক বিষয়ক সংবাদ প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫টির মতো প্রকাশিত হয়। বিশ্লেষণ মূলক সংবাদের সংখ্যা ৪-৫ টি।অনুসন্ধানী সংবাদ ও স্পেশাল ইভেন্ট নিউজ প্রকাশিত হয় ৩-৪টির মতো।সংবাদের ধরনের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে দেখা যায়, বিবিসির থেকে প্রথম আলো তুলনামূলক অনেক পিছিয়ে।
বিবিসির
মাল্টিমিডিয়ালিটি:
ছবি: বিবিসির মূল ওয়েবসাইটের নেভিগেশন বারে News সেকশনে Video, In Picture অপশন
বিবিসিতে একই ওয়েবসাইটে সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি অডিও, ভিডিও, লাইভ স্ট্রিমিং, ফটোগ্রাফি, অনলাইন টিভি, রেডিও ব্লগসহ নানান ক্যাটাগরির প্রকাশিত হয়। একই ওয়েবসাইটে একাধিক বিষয় প্রকাশের এই বিষয়টিকে মাল্টিমিডিয়ালিটি বলে।
বিবিসির
নেভিগেশন:
যেকোন ওয়েব সাইটের জন্যই নেভিগেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ ঐ ওয়েব সাইটে কি ধরণের তথ্য আছে এবং কোন ধরণের তথ্য কোথায় আছে তা সহজে খুঁজে পাওয়ার অন্যতম সহজ মাধ্যম হচ্ছে নেভিগেশন বার। মূলত নেভিগেশন বারে একটা ওয়েব সাইটের সকল পেজের লিংক বিশেষ পদ্ধতিতে, আকর্ষণীয়ভাবে প্রদর্শন করা হয়।আগের দিনে HTML টেবিলের মাধ্যমে নেভিগেশন বার তৈরি করা হতো, যা ব্যবহার বান্ধব এবং দেখতেও সুন্দর ছিলো না, কিন্তু বর্তমানে CSS ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক সুন্দর নেভিগেশন বার তৈরি করা যায়।প্রকৃত পক্ষে নেভিগেশন বার হচ্ছে কতগুলো লিংক এর লিস্ট।বিবিসিতে CSS ব্যবহার করে নেভিগেশন বার তৈরি করা হয়েছে।বিবিসির ক্ষেত্রে প্রত্যেক পাতায় আলাদা আলাদা রংয়ের নেভিগেশন বার দেওয়া হয়েছে, যার ওয়েবসাইটের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। নিচে বিবিসির কয়েকটি নেভিগেশন বারের চিত্র দেখানো হলো:
ইউজার
ইন্টারফেস:
খুব সাধারণ ভাবে বলতে গেলে ইউজার ইন্টারফেস হচ্ছে কোন একটি ওয়েব সাইট দেখতে কেমন হবে, ওয়েব সাইটটির প্রত্যেকটি অবজেক্টকে কি ভাবে ভিজিটরের কাছে উপস্থাপন করা হবে, ওয়েব সাইটটির কালার, ফন্টস, ইমেজ কম্পোজিশন কেমন হবে ইত্যাদি।
বিবিসির ওয়েবসাইটটিকে পর্যালোচনা করে ইউজার ইন্টারফেস নিচে সংক্ষিপ্ত ভাবে তুলে ধরা হলো:
লোগো: বিবিস তার নামের সাথেই লোগো অ্যাডজাস্ট করে রেখেছে। অর্থাৎ লোগোর মাঝেই রয়েছে বিবিসি লেখা। যা দেখতে যেমন দৃষ্টি নন্দন, একই সাথে দেখেই বোঝা যায় এটা বিবিসির লোগv|
কালার: ওয়েব সাইটে বিভিন্ন রংয়ের ব্যাপারে বিবিসি বেশ এগিয়ে। নেভিগেশন বারে রংয়ের ভিন্নতা বিবিসির ওয়েবসাইটকে আকর্ষণীয় করেছে। বিবিসির সংবাদে সব লেখায় শুধু মাত্র কালো রং ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সংবাদ দেখতে স্ট্যান্ডার্ড লাগে।
টেক্সট ফন্ট: সংবাদের ফন্টের ক্ষেত্রে বিবিসি তাদের নিজস্ব ফন্ট ব্যবহার করেছে। হেডলাইনের ক্ষেত্রে সাধারণত ফন্ট সাইজ ২০ থেকে ২৪ রেখেছে। এবং সংবাদ বডিতে ফন্ট সাইজ ১১ থেকে ১৩ পর্যন্ত রেখেছে। যা পাঠকের চোখে পড়ার জন্য আরামদায়ক।
ইমেজ: সংবাদের সাথে উচ্চ রেজুলেশনের ছবির ব্যবহার বিবিসির ওয়েবসাইটের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে।
গ্রাফিক্স: সংবাদের সাথে প্রয়োজন অনুসারে গ্রাফিক্সের ব্যবহার একদিকে যেমন সংবাদের উপস্থাপন ভালো করেছে। একই সাথে ওয়েবসাইটের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করেছে।
লে আউট: একটি ওয়েবসাইট দেখতে যতো সুন্দর হবে, পাঠকের কাছে ততো বেশি আকর্ষণীয় হবে। বিবিসির ওয়েব সাইটের লে আউট, অর্থাৎ হেডার এরিয়া, ফুটার এরিয়া এবং কন্টেন্ট এরিয়া বেশ সাজানো গোছানো। এতে করে পাঠক তার চাহিদা মতো জিনিস সহজেই খুঁজে পায়।
লিংক: প্রতিটি সংবাদের সাথে একই সাথে ফেসবুক লিংক, গুগল প্লাস এবং অন্যান্য মাধ্যমে শেয়ারের অপশন রেখেছে বিবিসি।
বিবিসি বাংলা:
বিবিসি বাংলাদেশে ধীরে ধীরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। একাধারে বিবিসির টেলিভিশন সংবাদ ও রেডিওর সংবাদের প্রতি এদেশের মানুষের আলাদা একটা দুর্বলতা কাজ করে। এই সুযোগটি নিয়েছে বিবিসি। বাংলাদেশের মানুষের জন্য তাদের ওয়েবসাইটের একটি বাংলা ভার্সন চালু করেছে বিবিসি।
খবর:
· প্রতি ঘন্টায় গড়ে ২/৩ টি সংবাদ দেওয়া হয়। তবে
· স্থান নয় বরং সংবাদের কন্টেন্ট এর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
· চলমান ঘটনার চেয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়। সংবাদগুলোতে অনেকগুলো করে প্যারা থাকে।
· গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ গুলোতে সংবাদ সূচনায় ‘ষড় ক’ নীতি বিদ্যমান থাকে।
· হেডলাইন গুলো একদম সহজ ভাষায় লিখা হয়। বেশিরভাগ সময় এ হেডলাইনের মাধ্যমে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয় দর্শকের মাঝে।
· সংস্কৃতি, সভ্যতা এবং যেসব বিষয় অন্যান্য অনলাইনের চোখ এড়িয়ে যায়, সেসব বিষয়ে প্রতিবেদন করে বিবিসি বাংলা।
অডিও:
· অডিও ক্যাটাগরীতে খুব একটা সংবাদ আপডেট হয় না। যেমন: সর্বশেষ অডিও সংবাদ দেওয়া হয়েছিল ৮ মে ২০১৯।
· অডিও সংবাদের নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই। কখনো ৫৫ সেকেন্ড আবার কখনো ১৫ মিনিট।
· অডিও সংবাদ এ প্রধানত বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গদের সাক্ষাৎকার এবং উপদেশ কে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
ভিডিও:
· ভিডিও সংবাদ প্রায় প্রতিদিনই দেওয়া হয় ৩/৪ টি। ভিডিওগুলোর দৈর্ঘ্য বেশি নয়। তবে ২/৩ মিনিটের ভিডিও সংবাদই বেশি।
ফটোগ্যালারী:
· এই অংশ তে মুলত ইউরোপ,আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের তোলা দারুণ দারুণ ছবি সমূহ বেশি জায়গা পায়।
· এছাড়া বিভিন্ন দেশের আলোচিত ও সমালোচিত, সামাজিক গণমাধ্যমে ভাইরালকৃত ছবি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের শিশুশ্রম এর ছবি, আন্দোলন-সংগ্রামী জীবনের ছবিগুলো তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশি
অনলাইনের
সাথে বিবিসির
তুলনা:
- বাংলাদেশি অনলাইনগুলো বিবিসিকে ফলো করে সংবাদ করলেও বিবিসি বাংলাদেশের কোনো অনলাইনকে ফলো করে না।
- বাংলাদেশের অনলাইন বড়জোড় দুই ভাষায় প্রকাশিত হলেও বিবিসি সারাবিশ্বের প্রায় ৩৪টি ভাষায় প্রচার হয়।
- বিবিসির ব্লগে প্রচুর আপডেট হলেও বাংলাদেশের অনলাইনের ব্লগগুলোতে খুব একটা বেশি আপডেট হয় না।
- বাংলাদেশের অনলাইনগুলোতে সংবাদের মাঝে ওয়েবসাইটে প্রচুর বিজ্ঞাপন থাকে। বিবিসিতে বিজ্ঞাপন থাকে, তবে তুলনামূলক কম থাকে।
- বিবিসির ওয়েবসাইট অনেক উন্নত এবং পাঠককে সহজেই আকৃষ্ট করতে পারে। বাংলাদেশের হাতে গোনা দুএকটি ওয়েবসাইটের প্রতি পাঠক আকৃষ্ট হলেও বেশির ভাগ অনলাইন সাইটে পাঠক তুষ্ট হতে পারে না।
- বিবিসিতে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবস্থা নেই।
- বিবিসির ওয়েব সাইটে উচ্চ রেজুলেশনের ছবি, গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়। যেখানে বাংলাদেশের ওয়েবসাইট গুলো বেশ পিছিয়ে।
- বিবিসি একমাত্র ওয়েবসাইট যাদের নিজস্ব নীতিমালা আছে।
- বিবিসির ফেসবুক পেজে লাইক ৪৯ মিলিয়ন, যেখানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লাইক ওয়ালা পেজ প্রথম আলোর লাইক ১৪ মিলিয়ন। এমনকি বিবিসি বাংলার পেজেও লাইক ১২ মিলিয়ন। এ থেকেই বোঝা যায় বিবিসির জনপ্রিয়তা কত।
- বিবিসির মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন অ্যাপস প্রথম আলো কিংবা বিডিনিউজ২৪ এর চেয়ে উন্নত মানের এবং এসব অ্যাপসের চেয়ে দ্রুত কাজ করে।
- বিবিসির ওয়েবসাইটে তুলনামূলক কম সময় লোড নেয়।
পরিশেষে,
বিশ্বে কর্মী সংখ্যার দিক থেকে বিবিসিই সবচেয়ে বৃহত্তম অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যমের তালিকাতেও শীর্ষে রয়েছে এই ওয়েবসাইটি। বিবিসির মূল ওয়েবসাইটে সংবাদের কাঠামো, মানের ব্যাপারে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। যদিও তাদের কিছু সংবাদে আমেরিকার প্রভাব নিয়ে বেশ সমালোচনা আছে, তবুও সেসব পাশ কাটিয়ে বিবিসি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। বিবিসিতে সংবাদ প্রচারিত হলে অনেকটা অন্ধের মতো বিশ্বাস করে মানুষ।
বিবিসির ওয়েবসাইটটিও যথেষ্ট পরিকল্পিত। প্রতিটি ক্যাটাগরী, ক্যাটাগরীর আবার সাব ক্যাটাগরী এভাবে সংবাদের সজ্জায় সুবিধা হয়েছে পাঠকের জন্য। এছাড়া বিবিসির অনলাইন ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের কোনো ঝামেলা নেই।
বিবিসি যেহেতু এখন আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে বেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তাই তাদের সংবাদের ব্যাপারে আরেকটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ইংল্যান্ড কেন্দ্রিক সংবাদ কিছুটা কমিয়ে চলমান বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা গুলো নিয়ে ফলোআপ নিউজে জোর দেওয়া প্রয়োজন।
বিবিসির একটা বড় সমালোচনা রয়েছে। সেটা হলো কোথায় মুসলিম কেউ হামলা করলেই সেটাকে বড় করে প্রচার করে এবং তাকে মুসলিম জঙ্গী হিসেবে অভিহিত করে। অন্যান্য ধর্মের কেউ হামলা করলে তাকে কেবল মাত্র শ্যুটার হিসেবে প্রচার করে। যদিও এই জায়গা থেকে এখন কিছুটা সরে আসছে বিবিসি।
বিবিসি যেহেতু বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। এর সংবাদ মান, ওয়েবসাইট, বস্তুনিষ্ঠতা, নীতি এসব মিলিয়েই আজকের অবস্থানে বিবিসি। তাই বিবিসির সংবাদ প্রকাশের ব্যাপার সর্বতা সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।